Bottom Article Ad

৪২ বছরেও নাম বিভ্রাটে জর্জরিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

 ৪২ বছরেও নাম বিভ্রাটে জর্জরিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়


স্বাধীন বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত প্রথম সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৭৯ সালের ২২শে নভেম্বর কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ শহর থেকে যথাক্রমে ২৪ ও ২২ কি. মি. দূরে শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় এ বিদ্যাপীঠ। তবে প্রতিষ্ঠার ৪২ বছরেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনির্দিষ্ট নামের প্রয়োগ দেখা যায়নি।

৪২ বছরেও নাম বিভ্রাটে জর্জরিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়


তথ্য সূত্রে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাক্ট অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হবে ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।' নামের বিষয়টি অ্যাক্টের তিন নং ধারার এক নং অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে। 

অ্যাক্টে বলা হয়েছে, ‘এই আইনের বিধান অনুযায়ী একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হইবে, যাহা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় নামে অভিহিত হইবে।’ অথচ অ্যাক্টের বাইরে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজে, পরিবহন বাসে, ক্যালেন্ডারে, বিভিন্ন জাতীয় দিবসের নিজ নিজ বিভাগীয় ব্যানারে, নিজ নিজ বিভাগের নোটিসে ও দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিকৃতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামটি ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামটা আসলে কি তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সবার মাঝে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও শাখায় ব্যবহৃত নামগুলোর মধ্যে রয়েছে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ-বাংলাদেশ, ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ। 

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনপুলে ৪৩টি গাড়ি রয়েছে। এসব গাড়িগুলোতেও লেখা আছে ভিন্ন ভিন্ন নাম। কোন গাড়িতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ, আবার কোনটাই লেখা আছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া অথবা শুধু ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

এদিকে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলের কার্ডেও নামের বিকৃত রূপ ব্যবহার করতে দেখা গেছে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইটে লেখা আছে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ।

তথ্য, প্রকাশনা ও জনসংযোগ দপ্তর থেকে প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডার ও ডায়েরি প্রকাশিত হয়। এতেও নাম বিকৃতি লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়াও এ দপ্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ বার্তাগুলো দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।

জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো ই-মেইলেও সাবজেক্ট হিসেবে ‘কুষ্টিয়া আইইউ নিউজ' শব্দ ব্যবহার করতে দেখা যায়। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বিকৃতির অন্যতম কারণ হিসেবে অনেকে এটিকে চিহ্নিত করেছেন।

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সভা-সেমিনার কিংবা জাতীয় দিবসগুলোতে নিজ নিজ বিভাগগুলোর ব্যানার গুলোতে নাম বিকৃতির বিষয়টি দেখা যায়। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবারই দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বিকৃতি বন্ধ করতে হবে।

জানা গেছে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে কুষ্টিয়া না ঝিনাইদহ হবে এ নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়টি কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহের মধ্যবর্তী শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুর নামক স্থানে অবস্থিত। দুই অঞ্চলের প্রভাবশালী মহল বিশ্ববিদ্যালয়টির পাশে নিজেদের জেলার নাম লেখায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চাপ দেয় বলে অভিযোগ আছে। ফলে কোনো প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামটির সুরাহা করতে পারেনি। 

তবে সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৭ জানুয়ারি ইবিতে চতুর্থ সমাবর্তন হয়। এ সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের পাশে থাকা কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহের বদলে ‘বাংলাদেশ' শব্দটি ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেই সময়ে এ নামটি ব্যবহারের ফলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দুই অঞ্চলের মানুষের রোষের মধ্যে পড়তে হয় বলে জানা গেছে। সম্প্রতি বিষয়টি সমাধানে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ইসলামী নাকি ইসলামি। কুষ্টিয়া না ঝিনাইদহ। নাকি কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ দুটোই অথবা শুধু বাংলাদেশ। নির্দিষ্ট কোন নাম পেলাম না আজও। এক বিশ্ববিদ্যালয়ের এত নাম। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম কখনো বিকৃত রুপে প্রচলিত থাকতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাক্টে যে নাম রয়েছে সেটা সব দপ্তরে প্রচলন করা হোক। বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে নির্দিষ্ট নাম থাকা জরুরি।

এ বিষয়ে ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম সময় নিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি আমিও অবগত হয়েছি। এ বিভ্রান্তি কাটানো দরকার। এটা নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে সমাধানের চেষ্টা করবো।’

রিয়াদ/

Post a Comment

0 Comments